ভালবাসার গল্প বলা খুবই সহজ।
কষ্ট শুধু তাদের যারা অনুধাবন করেন।আজকের দিনে প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে স্বীকৃতি
পায় ছেলে মেয়েরা।তাদের কারো কারো মতামত অনুযায়ী বিয়ের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু
এমন অনেকে আছেন যাদের বুকের ভিতরে ভালোবাসার স্মৃতি , জমে জমে কঠিন বরফে পরিনতে
হযে গেছে।কখনো কখনো হৃদযের জিহ্বা থেকে সেই বরফ গলে পড়ে।তেমনি একটি সংকলিত
ভালবাসার স্মৃতি তুলে ধরছ্
কোর্ট ম্যারেজ করার ভয়ে
ভালোবাসার স্বীকৃতি দিতে পারিনি। যে ভালোবাসার মানুষটাকে একটি দিনের জন্যেও ভুলতে
পারিনি।
আজ থেকে অনেক দুরে । প্রায়
দুই যুগ ধরে সাগর পাড়ে প্রাবাসী হয়ে আছে। জানি না তার কখনো আমাকে মনে পড়ে কি না।
আমাকে মনে না রাখারই কথা। কারন পারিবারিক চাপে আমি অন্যত্র বিয়েতে মত দিয়েছিলাম।
আমরা সহপাঠী ছিলাম।এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে অবসর কাটাচ্ছিলাম দুজনা। সেই সময় পরিচয়।
প্রথমে বন্ধু তারপর ভালোলাগা যে কবে ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়েছে তা বুঝতেই পারিনি।
দিনটি ছিলো ৬ এপ্রিল দুজন দুজনার কাছে ধরা পড়লাম। সেই থেকে ভালোবাসা আরো গভীর
হলো। তার সঙ্গে গল্প করে তার চিঠি পেলে আনন্দে আত্মহারা হতাম। দৈহিক প্রেম নয়।
কিন্তু মনের দিক থেকে আমরা একে আপরের জন্য পাগল ছিলাম যতোক্ষন এক সঙ্গে থাকতাম
ততোক্ষনই ভালো লাগতো্ তরুন বয়সের সেই সব ঝলমলে স্মৃতি এতো বছরেও একটা দিনের জন্যেও
ভুলিনি। সেই ভালোলাগার দিনগুলো খুব মধুর ছিল।
কিন্তু আমার ভাগ্যে প্রসন্ন
ছিলো না। তাকে লেখা আমার একটা চিঠি তার গুরুজনের হাতে পড়ে গেলো্ তারা আমার বাবা
মার কাছে নালিশ করলো এতে আমার বাবা-মা খুব অপমানিত বোধ করলেন্ সেই থেকে আমার ওপর
নেমে আসে নানা রকম বিধি-নিষেধ।তখনকার দিনে আমরা মেয়েরা একা একা খুব বেশি বাইরে বের
হতাম না্ তাই কলেজ পালিয়ে দেখা করতাম। চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতাম। এভাবে
সবার চোখ ফাকি দিযে যোগাযোগ করতাম্ চার বছর খুব কষ্ট করে কাটালাম্ কিন্তু আমার
বাড়িতে অশান্তি নেমে আসে ভীষনভাব্
আমরা তিন বোন ছিলাম্ দেখতে
মোটামুটি ভালোই ছিলাম্ আমি বড় তাই নানান জায়গা থেকে বিযের প্রস্তার আসতে লাগলো। নানান
অজুহাতে সব নাকচ করছিলাম্
আমার আব্বা আম্মা সবই
বুঝতেন।
মা ছিলেন খুব রগচটা প্রকৃতির
মহিলা। আমাকে মারধর গালিগালাজ করতেন প্রতিদিন। চোরের মতো থাকতাম সব সময় চোখের পানি
ফেলতাম, আল্লাহকে ডাকতাম।আব্বু ঠান্ডা মাথার লোক ছিলেন। আমাকে অনেক বোঝাতেন, আমি
যেন পরিবারের বদনাম করে কোট ম্যারেজ না করি। আব্বার মাথায় হাত রেখে শপথ করেছিলাম
কোর্ট ম্যারেজ করবো না। কিন্তু আমার স্বস্থ্য ভেঙ্গে গেলো। ভীষনভাব্ চোখের
দৃষ্টিশক্তি কমে গেলো কাদতে কাদতে। দুর থেকে মানুষ দেখলে চিততে পারতাম না। আব্বা
আমাকে একটা সুযোগ দিলেন। ওই ছেলেকে বলো, তাদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আনতে।
খুব কষ্ট করে তার সাথে
যোগাযোগ করে বললাম। সে বললো বাসা বলতে পারবো না চলো নিজেরা বিয়ে করি।আমার মাথায়
আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বাসায় এসে প্রচন্ড জ্বরে বিছানায় পড়লাম্ আমার দুর্বণ মনে দুর্বল
শরীরে । কোট ম্যারেজের কথা শুনলেই ভয় পেতাম। মনে হতো কোর্ট ম্যারেজ করলে আমার
আব্বা মারা যাবে।আমার জণ্যে ছোট বোনেরাও বিপদে পড়বে আব্বাকে দেয়া কথা রাখতে গিয়ে
আমার জীবনের সব আনন্দ হারালাম।
সেই সময় আত্মহত্যা করিনি
ঠিকই কিন্তু আম্মাকে হত্যা করলাম।
গুরু জনদের চাপের মুখে
বিয়েতে মত দিলাম । বিয়েরে কয়েকদিন আগে তার চিঠিগুলো পড়লাম । পাগল হয়ে বাসা থেকে
বের হলাম। কিন্তু যার মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম সেই ছেলেটা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলো ।
তখন ১৯৭১। সেই দিন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলে সব কিছু অন্য রকম হতো্ বাসায় ফিরে
তার কথাও চিন্তয় এলো্ সে তখন স্টুডেন্ট ।তখন বিয়ে করলেও সে আমাকে কোথায় আশ্রয় দেবে
তার ভবিষ্যত নষট করবো। এসব ভাবলাম। কিন্তু এখন বুঝি এসব ঘটনা এতো চিন্তা ভাবনা করে
হয়না।তখন বাড়ির মুরব্বিরা বলেছিলেম আমার ভগ্যে তার সাথে বিয়ে নাই।
আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে
গেলো। সে জানতেও পারলোনা ।তাকে বলেছেলাম যুদ্ধ শুরু হলেবিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।
১৯৭১সালের মার্চে তার সাথে
আমার শেষ দেখা হলো।বিয়ের পরও প্রতিটি দিন তাকে মনে করেছি। তার কুশল কামনা করেছি।
কিন্তু যোগাযোগ কারা চেষ্টা কখনো করিনি। তবে তার খবর কিছু কিছু জানতাম। সে বিয়ে
করেছে এবং স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে সুখেই আছে।