বিরহগাথা স্মৃতির পাতা-১
সুখ দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। সুখ আছে বলেই আমরা দুঃখের কথাগুলো ভুলতে পারিনা। পক্ষান্তরে দুঃখ আছে বলেই আমরা সুখের পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটে চলি। সুখগুলো ধরা দেয়না, আর দুঃখ পিছু ছাড়েনা। এমন কথার সাথে আমরা বেশি পরিচিত। অনেক কষ্টে সুখের দেখা পেলেও দুঃখ তার দলবল নিয়ে এসে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়।
ভুলতে পারিনা সেই দিনগুলোর কথা। আমরা দু্ই ভাই । অনেক বছর আগের কথা তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার বড় ভাই সিক্সে পড়ে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায়। আমার আব্বা ডাক বিভাগের পোষ্টম্যানের চাকুরী করতেন। খুব অভাবের ভিতর আমাদের দিন অতিবাহিত হতো। আম্মা ছেড়া শাড়ি নিজে সেলাই করে পড়তো। আব্বাও ঠিক একই রকম মাসের পর মাস একই জামা পড়ে দিন কাটাতো। অফিসে গিয়ে নিজের শার্ট টা খুলে মোটা কাপড়ের অফিসের ড্রেস পরতো। কনকনে শীতে কোনদিন আব্বাকে একটা গরম কাপড় কিনতে দেখিনি। আমাদের দুই ভাইকে নিক্সান ফুটপথ থেকে পুরানো গরম কাপড় কিনে দিতেন আব্বা। ঝুলে হাটুর নিচে নেমে যেতো। একটাতেই পার হতো তিন চার বছরের শীত।
আমি দেখেছি আমার আব্বাকে সকাল ৭টায় কাপতে কাপতে অফিসের পানে ছুটতে। অামি দেখেছি আমার আব্বা আম্মাকে চুলার পাশে বসে উষ্ণতা অনুভব করতে। আমি দেখেছি আমার আব্বা গোসল করে আম্মার শাড়ি দুই ভাজ করে লুঙ্গির মতো করে পড়ে ঘরে বসে থাকতো। ভেজা লুঙ্গিটি শুকানোর অপেক্ষায়। আমরা শুধু ঈদের সময় একটি করে জামা ও প্যান্ট পেতাম। বছরে একবার নতুন কাপড় পেতাম। আমার কাছে নতুন হলেও এটা আসলে নতুন না। খুলনা নিক্সান মার্কেটের ফুটপথ থেকে কেনা হতো। আর আব্বা আম্মা কিছুই কিনতো না। তাই নিয়েই খুশি থাকতাম। তখন এতো কিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝতাম যে, আমাদের সংসারে খুব অভাব। আব্বা যে বেতন পান তাতে আমাদের চলেনা। এখন চিংড়ি মাছের অনেক দাম কিন্তু তখন ঘুষো চিংড়ি (ছোট ছোট চিংড়ি) কেউ কিনতো বলে মনে হয় না। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মেনু ছিল ভাতের সাথে ডাটা আর চিংড়ি মাছের ঝোল। সাথে কখনো কখনো আলুভর্তা। আবার কখনো শুধু আলুভর্তা। অভাবের তাড়নায় আমার আব্বা আম্মা ভাতের ফেন (ভাতের মাড়) খেয়ে এক বেলার ভাত বাচিয়ে রাখতো , অন্য বেলার জন্যে। এখন তো আটার দাম তুঙ্গে তখন আটার এতো দাম ছিল না । লাল আটা বলে একটা আটা পাওয়া যেত। সেই আটার শুকনো রুটি খেয়ে কতো সকাল পার করেছি তার হিসাব মেলা দুস্কর।
সংসারের এই বেহাল দশায় আমার আম্মার কোল জুড়ে পৃথিবীতে আসে আমার ছোট দুই ভাই বোন (জমজ)।
চলবে ...............................................