ছবি সংগৃহিত
হাজার কষ্টের মাঝেও আমরা সুখি। ছোট ভাই বোন দুাটো ক্ষুধায় খুব বেশি কান্না করতো তখন আম্মা ফিডারে পানি ভরে ওদের মুখে দিয়ে রাখতো। আমরা দুই ভাই ছোট বেলার খেলাধুলা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা দুই ভাই, দুই ভাই বোনকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খেলা দেখতাম। ধীরে ধীরে ওরা বড় হতে লাগলো।
আমার ছোটবোনটা একটু পেটুক ছিলো। খাবার সামনে দেখলেই ও কেদে ফেলতো। সবাই ওকে অনেক মারধরও করেছি কিন্তু তাতে কাজ হতো না। সবাই যখন ভাত খাচ্ছি তখন বোনটি আমার ভাতের প্লেট সামনে নিয়ে অঝরে কাদছে। ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলতো না শুধু নিরবে কাদতো। এতে আর সবার আরো বেশি রাগ হতো। ওর কোনদিন খাবারে মন ভরতো না। আমার এই বোনটি এখন আর খেতে চায় না। অভাব ঘুচে সামান্যে স্বচ্ছলতা আসলো ।
আমাদের দুই ভাইয়ের ভর্তি আব্বা আমাদের কাকার কাছে পাঠালো। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। টুটপাড়া থেকে গল্লামারি দু্ই ভাই হাটতে হাটতে কাকার বাসায় গিয়েছিলাম । কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আবার হাটতে হাটতে ফিরে এলাম। এভাবে আমাদের দিন কাটতে থাকে । আমার বড় ভাই পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাশ করে ঢাকায় পাড়ি জমায়। অমি এসএসসি টেষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর আমার এক মামাকে বলেছিলাম -মামা আমি টেষ্টে পাশ করেছি। মামা বলেছিল তুই মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে আমার বাম হাতের তলায় লোম গজাবে। আজ আমার মাষ্টার্স কমপ্লিট। আমাদের সংসার ভালোই চলছিলো। অনেক হাসি আনন্দর মধ্যে দিন কাটতো। ভাইয়া যেদিন ঢাকা থেকে বাড়ি যেতো সেদিন সারারাত আমাদের কোন ভাই বোনের ঘুম হতো না, আনন্দে। ভাইয়াকে বাস কাউন্টারে আমরা নিতে আসতাম। আমাদের পরিবারে সবসময় হাসি ঠাট্টা লেগেই থাকতো।
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নলো ভাইয়াকে বিয়ে দেয়া হবে। গুটি কয়েক মেয়ে দেখার পর পছন্দ হয়ে গেলো।
অনেক ধুমধাম করে বিয়ে করালাম ভাইয়াকে। আব্বার জমানো সব টাকাই প্রায় খরচ হয়ে গেলো। কিন্তু দুঃভাগ্যে আমার ভাইয়ার সেখানে সংসার বেশিদিন টিকলো না। একবছরের মাথায় সংসার ভেঙ্গে গেলো। মেয়ের অন্য কোথাও নাকি লটরপটর ছিলো। শহরের মর্ডান মেয়ে তাই এগুলো তার ও তার পরিবারের কাছে কোন ব্যপারই না।
যাই হোক আবার মেয়ে দেখার পালা । এবার শহর নয় গ্রামের মেয়ে চাই। যে কথা সেই কাজ। গ্রামের মাটির ঘর থেকে খুব ভদ্র নামাজি পর্দানশীল মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হলো। মাস ছয়েক ভালোই ছিল। তার পর শুরু হলো পর্দার কেরামতি। আমরা সবাই ছিটকে পড়তে লাগলাম রক্তের বন্ধন থেকে থেকে। যে যে উনার কথা মতো চলতে পারবে সেই ভালো। মানসম্মান বলে কিছু আছে কিনা জানা নাই। তবে ভালো মন্দ জ্ঞান বিষয় যে অন্ধ তা নিশ্চিত। নিজে যা করবে সেটাই ভালো তার উপর আর কোন ভালো কাজ নেই। নিজের দোষ বলতে কিছু নাই। উনার একটাই কথা “আমি স্বার্থ ছাড়া এক পাও চলি না”। আরো অাশ্চর্য বিষয় হলো উনি পুথিগত বিদ্যায় মাষ্টার্স পাশ। আমার আম্মা যখন উনাকে খেতে ডাকতেন তখন উনি বলতেন -আমাকে এতোবার ডাকেন কেনো আমাকে আপনি ডাকলে আমার রাগ হয়।
আমাদের পরিবার আর পরিবার বইলো না। ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো। কখনো কখনো সবাই মিলে জোড়া দেবার চেষ্টা করলেও পর্দার কেরামতিতে জোড়া লাগেনা। একটা না একটা ঝামেলা বাধিয়ে সবাইকে আলাদা করে রাখবেই।