Saturday, January 21, 2017

পাগলী




পাগলী
আবদুল কুদ্দুস । বয়স ত্রিশের মতো হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ি হবিগঞ্জ। একটা বিদেশি সংস্থার আর্থিক সহায়তায় ঘুনিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের নিমাণ কাজে সোনাগাছির এ গ্রামে এসেছে। মার্জিত ব্যবহার আর বন্ধবাৎসল্যের কারনে অল্পদিনেই আমাদের মতো অনেকেই তার খুব ভালো বন্ধতে পরিনত হয়েছে।কারো সাথে যে খারাপ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি এমনো নয়। সাবকন্ট্রাকপরের স্থানীয় কিছু শ্রমিক তার ওপর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারনে বড়িই নাখোশ।
এই এলাকার বেশ কিছুদিন থেকে একটা অল্প সয়সী পাগলীর আনাগোনা অনেকেই লক্ষ্য করেছেন।অতি উৎসাহী কিছু লোক এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, পাগলিটার পরনে প্রায়ই ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের জামা প্যান্ট শোভা পাচ্ছে।প্রতিদিনের মতো একদিন সকালবেলা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাইট সংলগ্ন চায়ের দোকানে গেলাম। চায়ের দোকানের সবাই এতক্ষন কি একটা রসালো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিল্ আমাকে দেখে সবাই চুপ। চা খেয়ে দোকান থেকে পাানের গোদা কাশেমকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ব্যাপার কি জানতে চাইলাম।
কাশেম বললো গতরাতে এক নির্জন স্থান থেকে তারা ইঞ্জিনিয়ার আর পাগলিকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়েছে।পাগলীকে দুই চার ঘা আর ইঞ্জিনিয়ারকে বেশ ধোলাই দেয়া হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার বেটা রাত থাকতেই কাপড় চোপড় নিয়ে ভেগেছে।
বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার মতো প্রমান না পেয়ে বেশ অস্বস্তিতে ভুগছিলাম।ঘটনার ১২দিন পর ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের একটি চিঠি পেলাম।
চিঠির ভাষা-
অঅমি তখন এসএসসি পরীক্ষাথী। ছোট বোন রেখা ক্লাস নাইনে, তার পরের বোনটি এইটে। ব্যবসায়ী বাবা আর গৃহিনী মাকে নিয়ে খুবই সুখের সংসার আমাদের। কৃখের পরেই নাকি দুখ আসে। বুঝলাম যখন ছোট বোন রেখা কামার পাড়ায় এক হিন্দু ছেলের সাথে পালালো।সারা পাড়ায় ছিঃছিঃ পড়ে গেলো। আমি আর ছোট বোন শিখা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। সাতাশ দিনের মাথায় হেডমাষ্টার এসে স্কুলে নিয়ে গেলেন আমাদের। রেখা পালিয়েছে প্রায় এক বছরের উপর হলো। ঘরপোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।শিখার বিয়ের বয়স যদিও হয়নি তারপরেও বাবা উঠেপড়ে লাগলেন তাকে বিয়ে দেয়ার জন্যে।রেখার কেলেংকারী যারা জানে অথাৎ আমাদের আশেপাশের দুই চার গ্রামের কোথাও থেকে বিয়ের কোনো প্রস্তাব আসেনি। দুর দুরান্তের কোনো গ্রাম থেকে যদিও বিয়ের প্রস্তাব আসে একই কারনে তাও ভেঙ্গে যায়। বাবার টেনশন মায়ের সাথে দুরব্যবহার, আমাদের সঙ্গে রাগারাগীর সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো।পাকা রাস্তার পাশেই আমাদের বাড়ি। একদিন ভোরে মা উঠানে একটা পাগলিকে দেখে রেখা বলে চিৎকার দিয়ে পড়ে যান। আমি বাবা আর শিখা চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসি । মাকে নিয়ে বাবা আর শিখা টানাটানি করছে আর আমি গিয়ে পাগলিটাকে কয়েক ঘা লাগিয়ে দেই। মার হুশ ছিল। চিৎকার করে দৌড়ে এসে আমাকে বাধা দেন। বললেন ভালো করে দেখ কাকে মারছিস, ও আমাদের রেখা।অঅমরা এ কাকে দেখছি। পরনে একটা নতুন গামছা, গায়ে ময়লা একটা কোট। করুন পর্ব শেষে রেখাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে তার কোটের পকেটে একটা চিঠি পাওয়া যায়। পত্র লেখক লিখেছে। আমার সাধ্যের সব রকমের চিকৎসা তাকে করিয়েছি। সে এখন চিকিৎসার অনেক উর্দ্ধে। প্রায় এক মাস নিরুদ্দেশ থাকার পর আপনাদের শহরেই তাকে খুজে পেয়েছি।কোথায় নেবো ভেবে পেলাম না। তাই আপনাদের এখানেই রেখে গেলাম।আমাকে ক্ষমা করবেন। বদ্ধ উম্মাদ রেখাকে আট দিন একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা হলো। আমাদের ঘরের লোক ছাড়া আশে পাশের কেউ যেন রেখার অস্তিত্ব টের না পায় সেজন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।এই আটদিনে তার পরনে কোন কাপড় পরানো যায়নি।কোনোকিছু মুখেও দেয়নি।মা সারাক্ষন কান্নাকাটি করেন। আমি শিখা পারতপক্ষে বিবস্ত্র রেখার সামনে যাই না। বাবার হবভাবে বোঝা যায়, রেখাকে খুন করে মাটি চাপা দিতে পারলেই যেন তিনি বাচেন। আমার এক মামা মাইক্রোবাস চালাতেন। নবম দিন ফজরের নামাজের আগে গাড়ি নিয়ে মামা এলেন। কোনো রকমে একটা প্যান্ট পরিয়ে টেনেহেচড়ে রেখাকে গাড়িতে তোলা হলো। মায়ের সেকি বুক ফাটানো আর্তনাদ। আমি আর শিখাও কাদছি। বাবাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস না পেয়ে মামাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, রেখাকে চিকিৎসার জন্য পাবনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরের দিন সন্ধ্যায় বাবা ফিরলেণ। এই প্রথম বাবাকে কাদতে দেখলাম। সারা রাত তিনি কাদলেন। ফজরের পরে আমাকে ডেকে বললেন, তোর মামাকে গাড়ি নিয়ে আসতে খবর দে। অঅমি লক্ষ্য কলাম এক রাতে যেন বাবার বয়স অনেক বেড়ে গেছে।চোখ কোটরে যেন এক অর্থব বৃদ্ধ।
গাড়ি নিয়ে মামা আর বাবা আবার বের হলেন। তিন দিন পর দুপুরবেলা মাইক্রোবাস এস থামলো আমাদের বাসার সামনে। মামা দরপা খুলে দেখন পছেনের সিটে হেলান দিয়ে বাবা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাবার এ ঘুম আর কখনো ভাঙেনি। আমাদের শোকের সীমা রইলো না।আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বাবা চিরতরে বিদায় নিলেন।পরে মামার কাছে শুনেছি তারা দুজনে মিলে রেখাকে কয়েক’শ কিমি দুরে এক স্থানে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন। পরের দিন বের হয়ে মামা আর বাবা তিন দিন পযন্ত রেখাকে খুজেছেন, আর কোথাও খুজে পাননি।এই তিনদিনে বাবা কিছুই খায়নি। শুধু রেখা রেখা বলে কেদেছেন।সেদিনের পর থেকে পথেঘাটে কোন পাগলিকে দেখলে আমার হারিয়ে যাওয়া পাগলীর কথা মনে পড়তো।এদের মাঝে আমার রেখাকে খুজে পেতাম যদিও জানি এরা কেউ সত্যিকারে রেখা নয়।তারপরও এরা তো কারো না কারো আদরের বোন ছিলো ।
সেদিন আপনাদের এলাকায় আমার ওই পাগলী বোটিকে বিবস্ত্র দেখে আমার একটি প্যান্ট পরানোর চেষ্টা করছিলাম। এরপরের ঘটনা তো নিশ্চয় আপনি জানেন।

Friday, January 20, 2017

গাছ


গাছ
গাছপালা খুব ভালোবাসি। তাই আব্বাকে বলেছিলাম ছাদের ওপর পাকা বড় টব করে দিতে। আব্বা করে দিয়েছিলো। কাজি পেয়ারার চারা সংগ্রহ করলাম। কিন্তু তখনো টবের মাটিতে কোন প্রকার সার মেশানো হয়নি বলে চারা দুটো বেডকাউ দুধের বড় কৌটার মধ্য লাগিযে রাখলাম। এর মধ্যে হঠাৎ ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা হলো। মাকে বললাম চারা দুটোতে পানি দিতে। তারপর ঢাকা চলে গেলাম। দশ বারো দিন ঢাকায় থেকে খূলনায় ফিরলাম। দৌড়ে গেলাম ছাদে চারা দুটোর হাল দেখতে। দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো।
একটা চারা ভালোই আছে অন্যটি একেবারে শুকিয়ে পাতা বিবর্ন হয়ে গিয়েছে। মা পানি দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু কৌটার নিচটা একেবারে ভাঙ্গা থাকায় পানি সব বাইনে চলে দিয়েছে। শিকড়ে তেমন একটা পানি লাগেনি। প্রতিদিন আচ্ছামতো গাছের ওপর পানি ঢাললাম। পরদিন সামান্যতম পরিবর্তন ও দেখলাম না। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বাচাতে পারলাম না। শেষ চেষ্টা হিসেবে একটা বালতিতে পানি দিয়ে তার ভেতর গাছসহ কৌটা ডুবিয়ে রাখলাম। একদিন চলে গেল। দ্বীতিয় দিন দেখি একেবারে উপরের পাতা দুটিতে একটু সজীবতা ফিরে এসেছে। একটু সতেজ লাগছে। তারপর সেই গাছ বেচে উঠলো। নিজের ভিতর এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করলাম।আল্লাহর অশেষ রহমতে সেবাযত্নের মাধ্যমে একটি গাছকে বাচিয়ে তুললাম্
ছোট চারা বড় টবে লাগালাম। দিনে দিনে বড় হলো। ফূল এলো পেয়ারা এলো্ প্রায় এক কেজি ওজন একটা পেয়ারার। কচকচে আর দারুন মিষ্টি। আমি তো বটেই অনেকেই এতা সুন্দর পেয়ারা কোনদিন খায়নি বলে আমার পেয়ারা গাছের পেয়ারার প্রশংসা করলো।এক যুগের বেশি সময় ধরে এই গাছের পেয়ারা খাচ্ছি। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। গাছের গোড়ার মাটি খুব শক্ত হয়ে গিয়েছে। সারও দেয়া যায় না। টবের ইটও শিকড়ের চাপে ভেঙে গিয়েছে। পানি দিলে টবের ফাটল দিয়ে বাইরে পড়ে যায়। পেয়ারা আজও প্রচুর হয় কিন্তু আকারে ছোট।

সংকলিত............................

গোলাপী



গোলাপী
আমি লেখাপড়া তেমন জানিনা। শুধমাত্র প্রাইমারি পাশ দিয়েছি।হাই স্কুলে টিকে থাকতে পারলাম না। পড়ালেখায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম।নিতান্ত গরীব পরিবারের সন্তান তাই মাষ্টার নেয়ার কথা ভাবাটাই ছিলো স্বপ্ন। তবুও ৩য় থেকে ৮ম এর মধ্যে থাকতাম।বাবা মাঠে কাজ করতো আর আমি গেরোস্ত বাড়ির গরু চরাতাম।গরুর সাথে সাথে মাঠে প্রান্তরে নিজেও চরে বেড়াতাম।অামার সাথে পড়ত আমাদের পাশের বাসার গোলাপী।ওদের অবস্থায়ও নুন আনতে পানতা ফুরানোর হাল।গোলাপী মাঠে আসতো ছাগল চরাতে।
মাঠের পাশে পুকুরে হাসের ঝাক কিলবিল করতো। একদল পানিতে অারেকদল পাড়ে বসে ঘুমাচ্ছে। তার চেয়ে মজার বিষয়টা খেয়াল করে দেখতাম। মদ্দা হাস মায়া হাসকে তাড়া করে ফেরে সারাক্ষন। মদ্দা হাসটা মায়া হাসের পিঠে চড়ে মাথা কামড়ে ধরলেই মায়া হাসটা প্যাক করে স্বভাষায় ডেকে উঠতো। তখন গোলাপী আর আমি দুজন দুজনের দিকে জোরে জোরে হেসে উঠতাম। কখনো কখনো মদ্দা হাসকে মায়া হাসের পিঠে উঠতে বাধা দিতাম। লাঠি দিয়ে তারা করতাম।এমনি প্রকৃতির নানা লীলা দেখতে দেথতে সময় ভালোই কেটে যেতো।
এক চৈত্রর দুপুরে আমি আর গোলাপী গরু ছাগলের সাথে চরে বেড়াচ্ছি মাঠে। চারিদিক প্রখর রোদের তাপ। যতদুর চোখ যায় শুধু গরু ছাগল ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। আমি একটি গাছের ছায়ায় বসে বাবরা খাচ্ছিলাম এমন সময় গোলাপী এল।আমি গোলাপীর দিকে তাকাতেই গোলাপী বলল, একটা খেলা খেলবি। আমি বললাম কি খেলা। গোলাপী বলল তুই খেলাবি কিনা তাই বলেক।আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়লাম। গোলাপী এদিক ওদিক একবার পরখ করে দেখে অামার পাশে এসে ..........
.
এখন অামি আর গোলাপী মাঠে অাসি শুধু এই খেলার নেশায়। আমাদের এই খেলা মাঠের গন্ডি পেরিয়ে রাতের আধারে চলে আসে ঘরের কানাচে।
এরপর এক শীতের রাতে গোলাপীদের ঘরের পিছনে ঐ খেলা খেলছি আমরা । ধস্তাধস্তিতে গোলাপী কখন যে ওদের ঘরের হোগলার বেড়ার উপর পড়েছে তার কোন তোয়াক্কাই নাই।ধরা পড়ে গেলাম গোলাপীর দাদার হাতে।তারপর গ্রামের শালিসে আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ে মানে কি তখন আমরা দুইজনের কেউ অতটা বুঝতাম না।আব্বা-মা আর আমায় দেখতে পারে না। গোলাপীরে তেমন পাত্তা দিত না।তাই অামি গেরোস্ত বাড়ি কামলা হিসেবে কাজ শুরু করি আর গোলাপী ঐ একই বাড়ির কাজ শুরু করে।পেটে ভাতে ভালোই চলছিল দিনে কাজে আর বাকি সময় সুযোগ পেলেই...........ঐ।
  পরের বছর গোলাপীর পেটে একটা ছাওয়াল হলো।এভাবে এখন আমার ৩ ছাওয়াল ২ মিয়া। এখন আমি গোলাপীর কথায় ঐ খেলা খেলিনা।বড় ছাওয়াল ফোরে পড়ে।আমার ছাওয়ালেরে কই বাজান তুই আমার মতো কারো কথা শুনে ঐ খেলা খেলবি না।

Thursday, January 19, 2017

কে বড়



কে বড়
ভালবাসা এবং সুখ পরস্পর বন্ধু।
একদিন সুখকে ভালোবাসা বললো জানিস আমি আছি বলেই পৃথিবীতে তোর দাম আছে। সুখ মুচকি হেসে বললো না তোকে দিয়ে আমাকে পায় বলে মানুষ তোর কাছে যায়। সে হিসেবে আমার দাম বেশি।
ভালোবাসা বললো বেশ তাহলে চল, দুঃখের কাছে যাই তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি কার দাম বেশি। সুখ বললো চল।
তারা দুজন দুঃখের কাছে গেল্ দুঃখ মন খারাপ করে বসে আছে। সুখ আর ভালোবাসা কে আসতে দেখে চেহারাটা আরো কালো করে ফেললো।
সুখ বললো দুঃখ বলো তো পৃথিবীতে কার দাম বেশি, আমার না ভালবাসার ?
দুঃখ ভাবলো এই তো সুযোগ নিজেকে বড় করার।একে তো তাদের জন্যে মানুষ আমাকে দেখতেই পারে না। আমার কাছে থেকে দুরে থাকতে চায় । এখন তাদেরকে বড় বললে তারাও আমাকে ঘৃনা করবে। তাই দুঃখ ভেবে চিন্তে বললো, আসলে আমার জন্যই তোমাদের মূল্যায়ন করা হয়। মানুষকে আমি কষ্ট দেই বলে মানুষ তোমাদের কছে ফিরে যায়। সে হিসেবে আমার দাম বেশি। তারা কেউ কারো কথা মানতে রাজি হলো না। সবাই ঠিক করলো ঐশ্বযর কাছে যাবে। সুখ বললো চলো। তিনি বিচক্ষন, শিক্ষিত মানুষের সাথে তারা চলাফেরা।বুদ্ধিজীবিদের মগজে তার আনাগোনা। তিনিই পারবেন আমাদের সমাধান দিতে। ঐশ্বয সব শুনে বললো, তোরা সবাই বোকা। আমাকে ছাড়া তোদের আবার দাম কিরে ! ওই দুঃখ বেটা, মানুষ তোকে ঘৃনা করে কেন ?
দুঃখ হাত জোড় করে বললো, স্যার আমি শূন্য, মানুষকে কেবল কষ্ট দিই।অামি অন্ধকার।তাই আমার কাছে মানুষ আসতে চায় না।
ঐশ্বর্য বললো,আর তার বিপরিত আমি। কিরে সুখ তুই আবার বড় হলি কবে ? তোর সব উপকরন অামিই তো জোগান দেই।
সুখ আর দুঃখ দুজনেই জড়সড়ো হয়ে গেলো ভয়ে।কিন্তু ভালবাসা সেই সময় নীরবে মাথা নিচু করে বসে ছিল।
এশ্বর্য বললো, তা ভালোবাসা সাহেব আপনার তো অনেক দিন আগে যবনিকা ঘটেছিল। এখন যে প্রদীপের মতো একটু একটু করে প্রান আছে তাতেই ঢের। মাথায় উঠতে চাইছেন কেন ?
ভালোবাসা বললো ভূল বললেন, আমার কখনো মৃত্যু হয়নি, হবেও না। যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে বেচে থাকবো।
আরে রাখেন মিয়া, মানুষের হৃদয়ে বেচে থাকবেন। সেই শিরি-ফরহাদ, দেবদাস-পার্বতীর সময় নেই। চলে গেছে অনেক আগে। এখন মানুষ ভালোবাসতে গেলেও পয়সা লাগে। পেমিকাকে ফুল দিবেন। পাচ টাকা থেকে আজকের দিনে বিশ টাকা পর্যন্ত। বার্থডে গিফট, ভ্যালেন্টাইন গিফট, পহেলা বৈশাখ, ডেটিং সেটিং কতো কি।পদে পদে টাকা আর টাকা।আর চটপটি, ফুচকা,চকলেট এগুলোতো অন্যসব খরচের কাছে দুধভাত।
ক্যালকুলেটর নিয়ে বয় বেটা হিসাব করে দেখ। ভার্সিটির ক্যঅম্পাস, কলেজে চত্বর, স্কুল মাঠসহ কতো আনাচে কানাচে হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে তোর আর্তনাদ।পাঠ ক্ষেতে, ঘরের কানাচে, আগানে বাগারে গুমরে মরচে কতো নিশ্পাপ ভালোবাসা। এখন মাঝে মাঝে ডাস্টবিনেও পাওয়া যাচ্ছে তোর অবৈধ মিলনের ফসল।আরো ঘৃনার কথা হলো প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারী তোর কারনে সতিত্ব হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ কুমারী।
শেষ পর্যন্ত যে কটা ভালোবাসা সফল হয়, দেখা যায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সংসার কুপোকাত।
ভালোবাসা আপত্তি করে উঠলো। বললো আমি মহৎ, নিষ্পাপ, পবিত্র্ মানুষের মনে আমার বসবাস। আমাকে পেতে কোনো কার্ড লাগেনা, ফুল লাগে না। যে আমার দিকে হাত বাড়ায় তারই হয়ে যাই। আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে অপব্যবহার করছে কিছু খারাপ মানুষ।
তবে রে শালা বলেই তেড়ে গেলো ভালোবাসার দিকে এশ্বর্য।
ঐশ্বর্যর বলিষ্ঠ শক্তির কাছে পরাজিত অসহায় দুর্বল কোমল ভালোবাসা।  

সংগৃহিত.......................................

Wednesday, January 18, 2017

আজো ভালোবাসি তারে

 আজো ভালোবাসি তারে
মহাকাশে কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র দীপ্তিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। প্রত্যেকের স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে।রয়েছে স্বতন্ত্র কক্ষপথ। সচরাচর কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে অপরের কক্ষপথে প্রবেশ করে বলে নজির নাই। এদের কারো সাথে কারো সংঘাতও নাই।
আমি এক গরীব পরিবারের ছেলে । প্রাইমারী স্কুল পাশ করার পর দুরের এক নামকরা হাই স্কুলে ভতি হই। সঙ্গে করে আনলাম দুটো সার্টিফিকেট। িএক সৎচরিত্র দুই মেধাবী ছাত্র। জায়গীর মিললো এক বিরাট বড়লোক বাড়িতে। আমার আচার আচরনে জায়গীর বাড়ির সকলে খুব সন্তুষ্ট হলো। গ্রামের সকলেও আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্লাস এইট পযন্ত নিরাপদেই কাটলো। বিপত্তি ঘটলো যখন ক্লাস নাইনে উঠলাম। লজিং মাষ্টারের উঠতি বয়সের মেয়ো আর ভাতিজি দুজনের বয়সের উতলা মেজাজ আমার উপর আসর করলো। তারা আমাকে উত্যক্ত করতে লাগলো। অসতর্কতার ভান করে নগ্নভাবে একজন বুকের আপেল যুগল এবং অপরজন আনার ‍দুটোকে দেখানো পর্যন্ত অগ্রসর হলো। আমি হতবাক। কারন আমার গলায় ঝোলানো দুটো সনদ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কে আমি সদা সচেতন।
এদিকে জীবনে প্রথম যেন দক্ষিনা হাওয়া আমায় স্পর্শ করতে লাগলো। কোকিলের স্বর আমার কানে মধু বর্ষন করলো। দিনমান যায় আলেভালে, নিদ নাই রাত্রি কালে।
এক চৈতি চাদনী রাতে আমি বিছানায় ছটফট করছি হঠাৎ আপন হাতের স্পর্শ আমার মধ্যে এক অজানা শিহরন জাগালো আমি পরম সুখ অনুভব করলাম্ এক নতুন জগতের দরজা আমার কাছে খুলে গেলো।
যাত্রা শুরু হলো্ এক মরন নেশার পানে। নেশাটা আমায় আষ্টে পিষ্টে পেয়ে বসলো্ ।মেয়ে দুটো আমায় ‍দিনে উত্যক্ত করে, উত্তেজিত করে । সামনে কিছুই বলতে পারিনা।রাতে আমি স্বমেহনের সুখ অনুভব করি।আমি আত্মকেন্দ্রিক হলাম। একদিন এক হাটুরে কবিরাজের স্বরনাপন্ন হলাম। মরন খেলার ভংঙ্কর পরিনতির কথা শুনে আতকে উঠলেও নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হলাম।চিন্তায় চিন্তায় মাথা ঘোরে, থেকে থেকে নেশা জাগে।
স্কুল জীবন শেষ করে কলেজ জীবনে পা রাখলাম্ সৎ চরিত্রের সনদ খানা বহাল থাকলেও ভালো ছত্রের সনদখানা বহাল থাকলো না।ল্যাংড়া ঘোড়ার চেয়ে ধীর গতিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে পড়াশোনা। বিএ পরিক্ষার আগে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আবিদাকে বিয়ে করতে হলো। বেকার জীবন তাই বৌ নিয়ে বাড়ি যাওয়া হলো না। কালে ভদ্রে শ্বশুরবাড়ি গেলে এক চাটাই ঘেরা ঘরে রাত বাস করতাম। এক পাশের ঘরে শ্বশুর-শাশুড়ি, অন্যঘরে এক ভাড়াটে। রাতে আলো জ্বেলে রাখা যায় না, ফিসফাস করে কথাও বলা যায় না। কোন প্রকার শব্দ করা যায় না। আবিদা কুমারী এবং অজ্ঞ। আর আমি ইচড়েপাকা ও ব্যর্থ।মনে পড়লো হাটুরে করিবাজের লেকচার। দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে নিরাশ হলাম।
বিস্তর চোখের জল আর বেদনা নিয়ে দুইজনের পূর্ন সম্পতিতে আমাদের কলহবিহীন দাম্পত্য জীবনের অবসান হলো। অভিভাবকেরা অবাক হলো্ আসল রহস্য কেউ জানলো না।
হঠাৎ আমাকে সম্পর্ন আবাক করে দিয়ে সেকালের ন্যশলাল ব্যাংক অব পাকিস্থানের সিনিয়র ক্লার্ক পদে আমার নিয়োগপত্র এলো। অামি অবাক । কারন সাক্ষাৎকার ভালো হলেও প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে স্বাস্থ্যগত কারনে আমার কোন চাকরি হবে না। যাইহোক আমি বদলে গেলাম।ভবিষ্যতের একটা নিশ্চয়তা পেলাম। মনে একটা স্বষ্তি ফিরে এলো। ছকবাধা জীবন্ কাজের বেটি রান্না করে দিয়ে যায় আমি আরামে খাই। স্বাস্থ্য ভালো হতে লাগলো । আবিদার কথা খুব মনে পড়ে।বুক চনচন করে ওঠে। হঠাৎ করে একদিন নুরুল ইসলামের যৌবনের ঢেউ এবং আবুল হাসনাতের যৌন বিজ্ঞান বই দুটোর সন্ধান পেলাম। বই দুটি মন দিয়ে পড়লাম । অমূলক ভয় কিছুটা দুর হলো। এক রাতে ওপাড়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিলাম। উৎরে গেলাম । আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। ততোদিনে আবিদার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। হাসনাবানুকে বিয়ে করলাম। নতুন জীবন পেলাম। সন্তাসন্ততিরা আজ দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।দাম্পত্য জীবনে আমরা খুব সুখী। যর ভাঙ্গা মেয়ের আমাদের সমাজে ভালো বিয়ে হয়না।আবিদার সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি। তার চোখেমুখে বেদনার ছাপ দেখেছি।
অতীতের স্মৃতি আমার হৃদয়কে খুব কাদায়। তাকে আমি দুঃখ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি।
আজও আমি দুর থেকে তাকেই ভালোবাসি।


সংকলিত.................