আজো ভালোবাসি তারে
মহাকাশে
কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র দীপ্তিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। প্রত্যেকের স্বতন্ত্র অবস্থান
রয়েছে।রয়েছে স্বতন্ত্র কক্ষপথ। সচরাচর কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে অপরের কক্ষপথে প্রবেশ করে
বলে নজির নাই। এদের কারো সাথে কারো সংঘাতও নাই।
আমি এক
গরীব পরিবারের ছেলে । প্রাইমারী স্কুল পাশ করার পর দুরের এক নামকরা হাই স্কুলে ভতি
হই। সঙ্গে করে আনলাম দুটো সার্টিফিকেট। িএক সৎচরিত্র দুই মেধাবী ছাত্র। জায়গীর
মিললো এক বিরাট বড়লোক বাড়িতে। আমার আচার আচরনে জায়গীর বাড়ির সকলে খুব সন্তুষ্ট
হলো। গ্রামের সকলেও আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্লাস এইট পযন্ত নিরাপদেই কাটলো।
বিপত্তি ঘটলো যখন ক্লাস নাইনে উঠলাম। লজিং মাষ্টারের উঠতি বয়সের মেয়ো আর ভাতিজি
দুজনের বয়সের উতলা মেজাজ আমার উপর আসর করলো। তারা আমাকে উত্যক্ত করতে লাগলো। অসতর্কতার
ভান করে নগ্নভাবে একজন বুকের আপেল যুগল এবং অপরজন আনার দুটোকে দেখানো পর্যন্ত
অগ্রসর হলো। আমি হতবাক। কারন আমার গলায় ঝোলানো দুটো সনদ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কে
আমি সদা সচেতন।
এদিকে
জীবনে প্রথম যেন দক্ষিনা হাওয়া আমায় স্পর্শ করতে লাগলো। কোকিলের স্বর আমার কানে
মধু বর্ষন করলো। দিনমান যায় আলেভালে, নিদ নাই রাত্রি কালে।
এক চৈতি
চাদনী রাতে আমি বিছানায় ছটফট করছি হঠাৎ আপন হাতের স্পর্শ আমার মধ্যে এক অজানা
শিহরন জাগালো আমি পরম সুখ অনুভব করলাম্ এক নতুন জগতের দরজা আমার কাছে খুলে গেলো।
যাত্রা
শুরু হলো্ এক মরন নেশার পানে। নেশাটা আমায় আষ্টে পিষ্টে পেয়ে বসলো্ ।মেয়ে দুটো
আমায় দিনে উত্যক্ত করে, উত্তেজিত করে । সামনে কিছুই বলতে পারিনা।রাতে আমি
স্বমেহনের সুখ অনুভব করি।আমি আত্মকেন্দ্রিক হলাম। একদিন এক হাটুরে কবিরাজের
স্বরনাপন্ন হলাম। মরন খেলার ভংঙ্কর পরিনতির কথা শুনে আতকে উঠলেও নিজেকে সামলাতে
ব্যর্থ হলাম।চিন্তায় চিন্তায় মাথা ঘোরে, থেকে থেকে নেশা জাগে।
স্কুল জীবন
শেষ করে কলেজ জীবনে পা রাখলাম্ সৎ চরিত্রের সনদ খানা বহাল থাকলেও ভালো ছত্রের
সনদখানা বহাল থাকলো না।ল্যাংড়া ঘোড়ার চেয়ে ধীর গতিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে পড়াশোনা।
বিএ পরিক্ষার আগে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আবিদাকে বিয়ে করতে হলো। বেকার জীবন তাই বৌ
নিয়ে বাড়ি যাওয়া হলো না। কালে ভদ্রে শ্বশুরবাড়ি গেলে এক চাটাই ঘেরা ঘরে রাত বাস
করতাম। এক পাশের ঘরে শ্বশুর-শাশুড়ি, অন্যঘরে এক ভাড়াটে। রাতে আলো জ্বেলে রাখা যায়
না, ফিসফাস করে কথাও বলা যায় না। কোন প্রকার শব্দ করা যায় না। আবিদা কুমারী এবং
অজ্ঞ। আর আমি ইচড়েপাকা ও ব্যর্থ।মনে পড়লো হাটুরে করিবাজের লেকচার। দাম্পত্য জীবন
সম্পর্কে নিরাশ হলাম।
বিস্তর
চোখের জল আর বেদনা নিয়ে দুইজনের পূর্ন সম্পতিতে আমাদের কলহবিহীন দাম্পত্য জীবনের
অবসান হলো। অভিভাবকেরা অবাক হলো্ আসল রহস্য কেউ জানলো না।
হঠাৎ আমাকে
সম্পর্ন আবাক করে দিয়ে সেকালের ন্যশলাল ব্যাংক অব পাকিস্থানের সিনিয়র ক্লার্ক পদে
আমার নিয়োগপত্র এলো। অামি অবাক । কারন সাক্ষাৎকার ভালো হলেও প্রায় নিশ্চিত ছিলাম
যে স্বাস্থ্যগত কারনে আমার কোন চাকরি হবে না। যাইহোক আমি বদলে গেলাম।ভবিষ্যতের
একটা নিশ্চয়তা পেলাম। মনে একটা স্বষ্তি ফিরে এলো। ছকবাধা জীবন্ কাজের বেটি রান্না
করে দিয়ে যায় আমি আরামে খাই। স্বাস্থ্য ভালো হতে লাগলো । আবিদার কথা খুব মনে
পড়ে।বুক চনচন করে ওঠে। হঠাৎ করে একদিন নুরুল ইসলামের যৌবনের ঢেউ এবং আবুল হাসনাতের
যৌন বিজ্ঞান বই দুটোর সন্ধান পেলাম। বই দুটি মন দিয়ে পড়লাম । অমূলক ভয় কিছুটা দুর
হলো। এক রাতে ওপাড়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিলাম। উৎরে গেলাম । আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম।
ততোদিনে আবিদার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। হাসনাবানুকে বিয়ে করলাম। নতুন জীবন পেলাম। সন্তাসন্ততিরা
আজ দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।দাম্পত্য জীবনে আমরা খুব সুখী। যর ভাঙ্গা মেয়ের আমাদের
সমাজে ভালো বিয়ে হয়না।আবিদার সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি। তার
চোখেমুখে বেদনার ছাপ দেখেছি।
অতীতের
স্মৃতি আমার হৃদয়কে খুব কাদায়। তাকে আমি দুঃখ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি।
আজও আমি
দুর থেকে তাকেই ভালোবাসি।
সংকলিত.................