Sunday, January 28, 2018

কোনো এক শীতসন্ধ্যা

শীতের সন্ধ্যারাতে বিস্তৃত শান্ত ঢেউয়ের পানিতে ছোট একটা নৌকায় শুয়ে জগতের সকল নিস্তব্ধতা একত্র করে, দুচোখ মেলে তারা দেখাই জীবন। কতোক্ষন এভাবে শুয়ে ছিলাম জানিনা। ইঞ্জিল চালিত নৌকার শব্দে উঠে বসি। সন্ধ্যার সবচেয়ে উপভোগ্য মুহূর্তটি সাথে নিয়ে দুরের নিভু নিভু আলোর খেয়া ঘাটের দিকে চেয়ে রইলাম।
মনের গহীনে রঙ্গীনস্বপ্ন আর চোখে সাদা কালো ফ্রেম।  নদীর গহীন জল ছলাত ছলাত শব্দে ঝিলিক দিয়ে কি যেন বলে যায়। পরম আদরে নাকে মুখে হাত বুলিয়ে দেয় শীতল হাওয়া। শির শির করে  হিম বয়ে যায় আপাদমস্তক। চোখ বুজে অনুভব করি প্রকৃতির কোলে  শুয়ে থাকার প্রশান্তি।
মাথায় ধরে না জগতের লীলা।
গাছের পাতাগুলো বাতাসের তোড়ে দুলছে, নাকি আমায় দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। দুর আকাশের তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলছে নাকি আমায় দেখে উপহাস করছে। বুঝতে পারিনা।
নদীর দুঃখ যদি হয় তার বুকে জেগে ওঠা চর। তাহলে কি কুল ভাঙ্গা নদীর খেলা।
কুল ভাঙ্গা যদি নদীর খেলাই হয় তবে আমি কার হাতের খেলনা। আমার বুকে আশা'র পাহাড়, মনে রঙ্গিন স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়ার খেলা কার।
মহান সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার কোনো ভূল হতেই পারে না। এটা আমার মনের দৃঢ় বিশ্বাস। তার যদি ভূল হতো তাহলে পৃথিবীটা  সূর্যের চারপাশে সারাজীবন ঘুরতো না ক্লান্ত হয়ে অন্য মালিকের অধিনে চলে যেতো।
আবার স্কুল ফাকি দেয়ার মতো সূর্যটা ও ফাকি দিয়ে সকালের পরিবর্তে রাতে উঠতো
সবই ঠিক আছে শুধু ঠিক নাই একটি জায়গায়।  কেনো দুঃখগুলো পিছু ছাড়েনা, আর সুখগুলো ধরা দেয়না।  যাদের আপন ভেবে বুক পেতে দেই, যাদের দুঃখে  দুখি হই।  তারা কেনো আমার বুকের রক্ত দিয়ে হলি খেলে সুখি হতে চায় ।
এটা আমার নিয়তি নাকি বিধাতার খেলা।
সন্ধ্যা থেকে রাত গড়ালো, ভাবনার তরী গিয়ে ঠেকলো আধারের চরে। শীতের চাদর  মুড়িদিয়ে প্রকৃতি হারিয়েছে তার নিজের চরিত্র। মানুষের জীবনে যাই ঘটুক সবই প্রকৃতি প্রদত্ত এটা বিশ্বাস করি। আবার এটাও মানি যে সবকিছু প্রকৃতিগত নয়।
জীবনের কষ্টগুলো শুনে উপহাস করার মতো আপনজন পেয়েছি কিন্তু অনুধাবন করার মতো হয়তো একজনও না। ভীতরটায় হাহাকার নিয়েও হাসতে হয়, এইতো নিয়তি। কাকে দোষ দেবো নিজেকে, আশ পাশের মানুষগুলোকে, নাকি বিধাতাকে। কেউ দোষ নিতে চায়না। আর বিধাতাকে কিভাবে দোষ দেবো। বিধাতা যে আমায় অমূল্য জীবন দান করেছে।  পৃথিবীর শস্যক্ষেতে পরম আদরে আমায় বুনে দিয়েছে। তার গুন ও অবদানের কোনো শেষ নাই। তাই সব নিজের কাধে চাপিয়ে  নিরবে নয়নাশ্রু বিসর্জন করি। একদিন ভাবতাম আমি একা নই,  আমার সবাই আছে। যখন ঘোর কাটলো তখন অনেক দেরিহয়ে গেছে। চারিপাশ ফাক ধু ধু মরুভুমির মতো। আর বুক ভরা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অসহ্য যন্ত্রনা। সবাই আমার আমি কারো না।
নুন্যতম করুনা কেউ কেউ দেখিয়েছে।  তাতেই হয়তো আমি স্বর্গ পেয়েছি। কারন করুনা কাকে বলে তাই যে জানিনা। ক্ষণে ক্ষণে মনে হয় জীবন থেকে পালিয়ে যাই।  না ফেরার দেশে গিয়ে যোগ দেই লাশের মিছিলে। কি হবে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে যে নিজেই নিজের ভালো বোঝে না।
আমার না পাওয়া কষ্টগুলো আমায় বড় যন্ত্রনা দেয়। ভেতরের রক্তক্ষরনকে কনর্ভাট করে অনেক কষ্টে মুখে হাসি ফুটাই।  কেউ একজন আমার হাসিতে যদি হাসে।